বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা: মুখে স্বীকার না করলেও দলের ভেতরে যে ভাবে বিদ্রোহ দেখা দিচ্ছে, তাতে আর ঝুঁকি নিতে রাজি নন তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন হতে এখনও ছ’মাস দেরি আছে। কিন্তু এখন থেকেই জেলা সফরে বেরিয়ে পড়েছেন তিনি। শুভেন্দু অধিকারীর ধাক্কাটা যে দলের ওপর ভালোই প্রভাব পড়েছে, তার প্রমাণ পাওয়া গেল সোমবার মেদিনীপুরের সভায়। যদিও নিজের দীর্ঘ বক্তৃতায় একবারও নাম নেননি শুভেন্দুর। আবার বিধায়ক এবং দলের সদস্য পদ ত্যাগ না করলেও শুভেন্দু বা তাঁর (অধিকারী) পরিবারের কাউকে এদিন সভায় উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি। যদিও নেত্রীর মুখে উঠে এসেছে রামনগরের বিধায়ক তথা শুভেন্দু–বিরোধী হিসেবে দুই মেদিনীপুরে পরিচিত অখিল গিরির নাম।
এদিন রাজনৈতিক বিষয়ই প্রধান্য পেয়েছে নেত্রীর বক্তব্যে। আর সে কথা বলতে গিয়ে তিনি দলের মধ্যে যাঁরা দলবিরোধী আচরণ করে চলেছেন, তাঁদের বারবার সতর্ক করে দিয়েছেন। যাঁরা দলবিরোধী কাজ করছেন, মানে দলে থেকেও দলের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তাঁদের সঙ্গে যে বিরোধী দলগুলির, বিশেষ করে বিজেপির কোনও আঁতাত তৈরি হয়েছে, সে কথাও এদিন নেত্রীর কথায় পরিষ্কার হয়ে যায়। এদিন তিনি বিজেপি–সহ বিরোধী দলগুলির বিরুদ্ধে ঘর ভাঙার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে। ভাবছে, এভাবেই চলবে। শুধু গালাগালি দিয়ে বেড়াচ্ছে। অনেক টাকা ছড়াচ্ছে। দাঙ্গা লাগাচ্ছে। মিথ্যে বলছে। কুৎসা করছে। চক্রান্ত করছে। অপপ্রচার করছে। সরকার ভাঙছে। দল ভাঙছে। ঘর ভাঙছে। মানুষের ভালবাসা ভাঙছে।’ তার পরই তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘ভারতবর্ষের মাটি থেকে তোমাদের উৎখাত হওয়ার সময় চলে এসেছে। আগে নিজেদের বাঁচাও।’
এদিন নিজের বক্তব্য পেশ করার শুরুতেই তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মেদিনীপুরে অখিল গিরির ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘যখন তৃণমূল তৈরি করি, কাঁথি থেকে প্রথম অখিল গিরি লড়াই করেছিলেন। সেদিন আমরা জিততে পারিনি। তবে আমরা দ্বিতীয় হয়েছিলাম।’ তখনই প্রশ্ন ওঠে, তা হলে কি মমতা দুই মেদিনীপুর, তথা জঙ্গল মহলে শুভেন্দু অধিকারীর বিকল্প হিসেবে অখিল গিরিকেই তুলে ধরতে চাইছেন? তা না হলে সভায় একবারও শুভেন্দুর নাম উচ্চারণও করলেন না কেন? তবে তাঁর নাম না করে একবার বেশ কড়া সুরে বলেন, ‘মনে রাখবেন, তৃণমূল অত দুর্বল দল নয়। যদি কেউ মনে করে, তৃণমূলকে ব্ল্যাকমেল করব, বারগেনিং করব, ভোটের সময় তৃণমূলকে দুর্বল করে দেব, তা হবে না। যাঁরা এই খেলা খেলতে চাইছেন, আমি তাঁদের সতর্ক করে দিয়ে বলছি, আগুন নিয়ে খেলবেন না। যাকে খুশি জব্দ করতে পারেন, কিন্তু তৃণমূলকে পারবেন না। জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূল লড়াই করে বেঁচে আছে। সুতরাং তৃণমূলের ক্ষতি করাটা অত সহজ নয়।’
এদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন মেদিনীপুরে সভা করছেন, তখন শুভেন্দু অধিকারীকে কলকাতায় দেখা গিয়েছে। সূত্রের খবর, এদিনের সভায় শুভেন্দু অধিকারীকে তৃণমূলের তরফে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এর আগে যতবার মেদিনীপুরে মমতা গিয়েছেন, ততবারই শুভেন্দু তাঁর পাশে ছিলেন। সোমবার দুপুর তিনটে নাগাদ কাঁথি থেকে কলকাতা রওনা হন। প্রথমে সুকিয়া স্ট্রিটে আসেন। কিন্তু সেখানে সাংবাদিকদের দেখে আর গাড়ি থেকে নামেননি। আমহার্স্ট স্ট্রিট দিয়ে বেরিয়ে যান। উল্লেখ্য, বুধবার কলকাতায় আসছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। রাজনৈতিক মহলের মতে, তার আগে শুভেন্দুর কলকাতায় চলে আসার মধ্যে কোনও যোগসূত্র থাকতে পারে। যদিও শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে এমন দাবির সমর্থন মেলেনি।
আবার, শুভেন্দুর পর এবার মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি–সহ বিভিন্ন জেলায় পোস্টার পড়তে শুরু করেছে। এমনকী, হাওড়ায় নবান্নের কাছেও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে পোস্টার পড়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। অবশ্য এই পোস্টার পড়া নিয়ে রাজীববাবুর তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে তিনি বিষয়টির বিরোধিতাও করেনি। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, শুভেন্দুর পর কি এবার মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পালা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের।